ফলের নামের তালিকা

ফলের নামের তালিকা

ফল খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষের সংখ্যা বোধহয় খুবই কম। আমরা সকলেই ফল খেতে পছন্দ করি তবে এক এক জনের প্রিয় ফল এক এক রকম। আপনার প্রিয় ফল কি? আম, পেয়ারা, আপেল নাকি আনারস? নাকি জাতীয় ফল কাঁঠাল খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন? আজ আমরা দেশি এবং বিদেশি অনেক ফল নিয়ে কথা বলবো এবং এই ফলগুলোর পুষ্টিগুণ তুলে ধরব। কোন ফল থেকে আপনারা কি পরিমান পুষ্টি পেতে পারেন তা জেনে নিতে পারবেন আমাদের আজকের পোষ্টের মাধ্যমে।

আজকের পোস্টে আমরা তুলে ধরব বাংলাদেশের কোন ফল গুলো সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়। অনেক ফল রয়েছে যেগুলো আমরা খুব বেশি পছন্দ না করলেও এগুলোর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। যেমন ধরেন পেঁপের কথা বলা যাক। আমরা অনেকেই পেঁপে খেতে পছন্দ করি না। পাকা পেঁপে পছন্দ করলেও কাঁচা পেঁপে খেতে চায় না বেশিরভাগ মানুষই। কাঁচা ও পাকা উভয় পেঁপেতেই অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। চলুন একটি একটি করে আমরা বাংলাদেশী ও বিদেশী ফলগুলোর উপকারিতা জেনে আসি।

প্রথমেই কথা বলা যাক পেঁপে নিয়ে। পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান রয়েছে। এটা ক্যালসিয়াম ফসফরাস ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম এর মত খনিজ উপাদান বিদ্যমান। যদি ভিটামিনের কথা বলি তবে পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে। ভিটামিন এছাড়াও ভিটামিন বি সি ও কে রয়েছে পেঁপের মধ্যে। ত্বকের জন্য পেঁপে বেশ উপকারী একটি ফল। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন পেঁপে কে ও সঠিক গুনসম্পন্ন ফল বলা যায়। অ্যাজমা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ছাড়াও হৃদপিন্ডের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে মানুষ পেঁপে খেয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পেঁপে খেতে পারেন। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ পেঁপে উৎপাদন হয়। গ্রামাঞ্চলে গেলে আপনি অনেক অনেক পেঁপের বাগান দেখতে পাবেন। পেঁপে চাষ খুব বেশি লাভজনক না হলেও এটি মানুষের অনেক উপকার করে থাকে। কাঁচা পেঁপে আমরা সবজি হিসেবে রান্না করে খেয়ে থাকি।

পেঁপের পর এবার কথা বলব পেয়ারা নিয়ে। পেয়ারে এমন একটি ফল যা সারা বছর পাওয়া যায়। আমরা খুব কম দামে এই বাজার থেকে পেয়ারা কিনে খেতে পারি। অন্যান্য অনেক ফল থেকে পেয়ারায় পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। পেয়ারাতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন একটি পেয়ারায় বেশ কয়েকটি আপেলের সমান পুষ্টিগুণ রয়েছে। সে হিসেবে আমরা বলতে পারি বেশ কয়েকটি আপেল খাওয়ার চেয়ে একটি পেয়ারা খাওয়া অনেক ভালো। আপেল অনেক দামী একটি ফল তাই সবসময়ই আমরা আপেল কিনে খেতে পারি না কিন্তু খুব অল্প দামের মধ্যে পেয়ারা কিনে সব সময় খেতে পারি।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য কত উপকারী। ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করার জন্য হলেও নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া উচিত। ভিটামিন সি ছাড়াও পেয়ারার মধ্যে ভিটামিন এ থাকে। বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে পেয়ারা দারুন ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশে বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে কাঁঠাল পাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় কাঁঠাল সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। কাঁঠাল পেকে গেলে অনেক রসালো ও সুস্বাদু হয়ে থাকে। কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল।

গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে কাঁঠাল দেখা যায়। এ সময় প্রচুর পরিমাণ কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। কাঁঠাল অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল হলেও এটি স্বল্প মূল্যে বাজারে পাওয়া যায়। কাঁঠালের প্রচুর পরিমাণ আমি শর্করাও ভিটামিন রয়েছে। যেহেতু কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ খুব বেশি থাকে না তাই ওজন বৃদ্ধি পাবার ভয় একদমই নেই। কাঁঠাল পৃথিবীর সব দেশে পাওয়া যায় তবে প্রতিটি দেশে একই প্রক্রিয়ায় খাওয়া হয় না। বাংলাদেশেররা কাঁঠাল সবজি ও ফল দুই উপায়ে খেয়ে থাকে তবে অন্যান্য দেশে কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়া হয়।

কাঁঠালের পর কথা বলব আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সহজলভ্য একটি ফল আম নিয়ে। বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে আম সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তা নিশ্চয়ই আপনাদের জানার কথা। রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ নওগাঁ এই অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে বেশি আম উৎপন্ন হয়ে থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য জেলাগুলোতেও কমবেশি আমের উৎপাদন হয় তবে রাজশাহী বিভাগের মতো নয়। বলা যায় বাংলাদেশের সিংহভাগ আমের চাহিদা পূরণ হয় রাজশাহী বিভাগের আম দিয়ে।

শুধু বাংলাদেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণ আম উৎপন্ন হয়। আপনারা জানেন ভারত অনেক বড় একটি দেশ তাই এখানে যে কোন ফলের উৎপাদন অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। সে হিসেবে ভারত প্রতিবছর অনেক বেশি আম উৎপাদন করে। ভারত ছাড়াও চীন পাকিস্তান ও বাংলাদেশ কিংবা অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকাতেও অনেক আম উৎপাদন হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আম বাজার বিখ্যাত আম বাজার। এটিকে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আম বাজার বললেও ভুল হবে না। আমের অনেক জাত রয়েছে।

শোনা যায় আমের প্রায় ১০০টির ও বেশি জাত রয়েছে। আমের প্রতিটি জাতের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ভিন্ন ভিন্ন। আমের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাতের নাম হল, ফজলি, আশ্বিনা, হাড়িভাঙ্গা, তোতাপুরী, আম্রপালি, বউ ভুলানী ইত্যাদি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ আমের মৌসুমে অন্যান্য খাবারের চেয়ে আম বেশি খেয়ে থাকে। গ্রীষ্মের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি যে কয়েকটি ফল উৎপাদিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো আম জাম কাঁঠাল ও লিচু। আম ও কাঁঠাল নিয়ে আমরা স্বল্পপরিসরে আলোচনা করেছি। এখন আলোচনা করব জাম ও লিচু নিয়ে।

লিচুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। এছাড়াও শর্করা আমিষ ও স্বল্প পরিমাণে স্নেহ উপাদান থাকে লিচুর মধ্যে। লিচুর পুষ্টিগুণ নিয়ে বলার মত তেমন কিছু নেই। লিচু অনেক সুস্বাদু একটি ফল যে কারণে এটির অনেক চাহিদা থাকে বাজারে। গ্রীষ্মের মৌসুমে বাংলাদেশ লিচুর যা উৎপাদন হয় তা বাংলাদেশের মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়। বর্তমান সময়ে লিচুর দাম আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে লিচু কিনে খাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এখন কথা বলি জাম নিয়ে। শহরাঞ্চলের সাধারণত জামের গাছ খুব একটা দেখা যায় না। গ্রামের দিকে অনেক জাম গাছ রয়েছে। তবে জাম গাছ থেকে সংগ্রহের পর শহরে পাঠানো হয় সেখানকার মানুষের চাহিদা পূরণ করার জন্য। বর্তমানে জামের উৎপাদন আস্তে আস্তে কমে আসছে।

উৎপাদন কমে আসায় গ্রামের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের উচিত বাড়ির আঙিনায় আম জাম কাঁঠাল ও লিচুর গাছ লাগানো যেন এ গাছ থেকে আমরা মৌসুমী ফলের চাহিদা পূরণ করতে পারি। ফল হিসাবে আনারসের অনেক গুনগান শোনা যায়। আনারসের সবচেয়ে বড় উপকারিতা যেটি তা হল এটি হজমে সহায়তা করে। আনারসো প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং সি রয়েছে যা আমাদের দেহে ভিটামিনের অভাব পূরণ করে থাকে। আপনারা জানেন দাঁত ও মাড়ি শক্তিশালী করার জন্য শরীরে ভিটামিন সি এর গুরুত্ব কতটা।

এতক্ষণ আমরা শুধুমাত্র দেশি ফলগুলো নিয়ে কথা বললাম। দেশি ফলগুলো আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। দেশি ফল গুলোর গাছ কিভাবে লাগাতে হয়, কিভাবে এগুলোর যত্ন নিতে হয় এবং কিভাবে ফল উৎপাদন করতে হয় এগুলো সম্বন্ধে আমাদের স্বল্প হলেও ধারণা রয়েছে। বিদেশি ফল সম্বন্ধে এবং বিদেশি ফলের গাছের পরিচর্যা সম্বন্ধে আমাদের অনেকেই বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। আমাদের দেশের দেখা যায় এমন কিছু উল্লেখযোগ্য বিদেশী ফল হলো ড্রাগন ফল, মালটা অ্যাভোকাডো ও আরবি খেজুর।

এছাড়াও আরো অনেক বিদেশী ফল রয়েছে যেগুলো আমাদের কাছে অজানা তবে এসব ফলগুলো অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হয়ে থাকে। পরবর্তী কোনো পোস্টে আমরা বিদেশি ফলগুলো নিয়ে আলোচনা করব এবং এই ফলগুলো কিভাবে উৎপাদন করা যায় সে বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *