হিন্দু ধর্মের আদি পিতা ও মাতার নাম
হিন্দু ধর্ম একটি অতি পৌরাণিক ধর্ম। হাজার হাজার বছর আগে হিন্দু ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছিল। হিন্দু ধর্মের আসল নাম সনাতন ধর্ম। সনাতন শব্দের অর্থ পুরাতন। পুরাতন অর্থাৎ আদি। পৌরাণিক যুগের কাহিনী প্রাকৃতি এবং ধ্বংসস্তূপ দিয়ে অনুমান করা যায় যে হিন্দু ধর্ম একটি আদি ধর্ম। হিন্দু ধর্মের পরিধি ব্যাপক। ধর্মে রয়েছে নানা বৈচিত্রের নানা রকমের সম্প্রদায়। হিন্দু ধর্মে রয়েছে অগণিত পূজা-পার্বণ এবং অগণিত আচার অনুষ্ঠান।
হিন্দু ধর্মের নানা দেব-দেবতা একেক শক্তির অধিকারী। দেব দেবী ঈশ্বরের এক এক শক্তির একেক। যেমন সরস্বতী ঈশ্বরের বিদ্যাদানের রূপ। লক্ষ্মী ভগবানের ধন সম্পদ দানের রূপ। ব্রহ্মা দেবতা। বিষ্ণু পালনকারী। দেবী দুর্গার শক্তির প্রতীক। শিব শুভ্রের প্রতীক। গণেশ সিদ্ধির দেবতা। বিশ্বকর্মা কাজকর্মে সফলতা দান করে থাকেন। এভাবে ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। ঈশ্বরের কোন একক রূপ নেই। ভগবান তার ক্ষমতা দেব দেবীর মাধ্যমে আমাদের কাছে প্রদান করে থাকেন।
হিন্দু ধর্মের আদি পিতা মাতার নাম। আমরা ভগবান ব্রহ্মার সন্তান। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন।, আমরা সবাই প্রপিতামহ ব্রহ্মা থেকে এসেছি যদিও আমাদের আদি পিতা-মাতা যথাক্রমে মনু ও শতরূপা। শাস্ত্রমতে এবং ইতিহাস অনুসারে হিন্দু ধর্ম অবলম্বীরা বিশ্বাস করেন যে মনু ও শতরূপা হিন্দু ধর্মের আদি পিতা-মাতা। হিন্দু ধর্ম একটি ঐতিহ্যবাহী পৌরাণিক ধর্ম। বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন কাহিনীতে হিন্দু ধর্মের নানা আশ্চর্যজনক ঈশ্বরের লীলার কাহিনী উল্লেখ রয়েছে। বেদ ও পুরান মতে হিন্দু ধর্মের আদি পিতা-মাতা মনু ও শতরূপ।
ভগবান আমাদের পৃথিবীর পরিচালক। পৃথিবীতে সব কিছু ভগবানের ইশারায় চলে। চন্দ্র- সূর্য, গ্রহ -নক্ষত্র ,পাহাড় -পর্বত ,বৃক্ষ ,উদ্ভিদ, পশু- পাখি ,নদী -নালা ,খাল- বিল ,সমুদ্র, মানুষ ,হাতি ,ঘোড়া ,ছাগল ,কীটপতঙ্গ ,সবকিছু সৃষ্টি করেছে ঈশ্বর। ঈশ্বর এই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করে থাকেন। মানুষ মরণশীল। জন্মগ্রহণ করলে তার মৃত্যু ও অনিবার্য। কারণ মানুষ এবং পশু পাখির মৃত্যু না হলে পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হবে। পৃথিবীতে জনসংখ্যার পরিমাণ বিপুল বেড়ে যাবে। তাই ঈশ্বর বা ভগবান মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু দুইটাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
মানুষের এবং জীবের দেহের মৃত্যু হয় আত্মার মৃত্যু নেই। আত্মা এক , এর মৃত্যু নেই ,ধ্বংস নেই। আমরা যেরকম পুরাতন পোশাক ত্যাগ করে নতুন পোশাক পরিধান করি। কারণ পুরাতন পোশাকে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। ছিড়ে নষ্ট হয়ে যায় অচল হয়ে যায় ।তাই আমরা সুন্দর তা করতে পুরাতন পোশাক ত্যাগ করে নতুন পোশাক পরিধান করি। এভাবে আত্মাও পুরাতন দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহে জন্মগ্রহণ করে।
দেহ বিনষ্ট হয় কিন্তু আত্মা নষ্ট হয় না। আত্মা এক এবং অদ্বিতীয়। এভাবে জন্ম মৃত্যুর খেলা চলতে থাকে। কর্মফল ভালো হলে মৃত্যুর পর আর জন্ম নিতে হয় না। মুখ্যলাভ হিসেবে ঈশ্বরের সান্নিধ্য প্রাপ্তি হয়। কিন্তু কর্মফল যদি ভালো না হয় তাহলে মানুষকে কর্মফল ভোগ করতে বারবার এই পৃথিবীতে জন্ম নিতে হয়। তাই আমাদের মুখ্য লাভের চিন্তা করে, সুষ্ঠু কর্মফল ভোগ করতে, পাপকর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে। আমাদের মুখ্য লাভের আশা করে জীবন অতিবাহিত করতে হবে।
শাস্ত্রে বলা আছে ঈশ্বর সকল জীব এর ভিতর বাস করে। বলা হয় জীব সেবা করলে ঈশ্বর সেবা করা হয়। জীবের সেবা করলে, তাদের খাদ্য দিয়ে অথবা ভালোবাসা দিয়ে যত্ন করলে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা যায়।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন
জীবে প্রেম করে যেই জন,,, ।
সেই জন সেবিছে ঈশ্বর,,,,,,।
জীব সেবা করলে, কে ভালবাসলে ঈশ্বরকে ভালোবাসা হয়। তাই আমাদের উচিত জীব সেবা করা, অন্যায় থেকে বিরত থাকা। ঈশ্বরের আরাধনা করা। নানা ধরনের স্তব্ধি স্তুপ পাঠ করা। অর্চনা করা। গরিব-দুঃখীদের সেবা করা। এগুলো সেবামূলক কাজ করলে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন।
ভারতবর্ষের আদি ধর্মগ্রন্থ যেমন বেদ ও পুরান। উক্ত ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে হিন্দু ধর্মের অনেক ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে। ভারতবর্ষে অনেক স্থানে হিন্দু ধর্মের নানা ধ্বংসস্তূপ উদ্ধার করা হয়েছে। এবং নানা পুরাকৃতি সংগ্রহীত করা রয়েছে। আদি ভারতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী পৌরাণিক হিন্দু সমাজ থেকে হিন্দু ধর্মের আদি পিতা ও মাতা সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।