হিন্দু ধর্মগ্রন্থের নাম কি
হিন্দু ধর্মের বিস্তার এবং পরিধি বিশাল। ভারতবর্ষের মতো একটি বড় বিশাল রাজ্যকে হিন্দুস্তান বলে আখ্যায়িত করা হয়। আমাদের হিন্দু ধর্মের রয়েছে চারটি ধর্মগ্রন্থ। সেগুলো হলো:-,বেদ ,পুরান ,উপনিবেশ, এবং ,গীতা। গীতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সবচেয়ে প্রিয় একটি ধর্মগ্রন্থ। বেদ এবং পুরানে হিন্দু ধর্মের উৎপত্তির নানা কাহিনী নানা গল্প নানাপুরাকৃতি উল্লেখ রয়েছে।। বেদ এবং পুরানে পৈরাণী কাহিনী রয়েছে। বেদ এবং পুরান হিন্দুদের আদি ধর্মগ্রন্থ। বেদ এবং পুরানে আদি ঋষিবর। ঋষিমণি তাদের তপস্যা এবং ধ্যান ধারণার কথা উল্লেখ করেছেন। আদিতে পৌরাণিক ঋষিগণ তাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় ধ্যান ধারণা এবং ভগবানের তপস্যা করে কাটিয়েছেন। তারা কঠিন তপস্যার মধ্যে দিয়ে ভগবানকে লাভ করেছেন। তপস্যার মধ্যে দিয়ে তারা ভগবানকে উপলব্ধি করেছেন।
বেদ ও পুরাণে ভগবানের পূজা ,প্রার্থনা ,তপস্যা, ধ্যান -ধারণা, ভগবানকে উপলব্ধি ,ভগবানকে প্রাপ্তি এগুলো বিষয় সম্পর্কে নানা কাহিনীর উল্লেখ রয়েছে। পুরানে উল্লেখ রয়েছে ঋষিবর -মুনি ঋষি দীর্ঘদিন তারা অনাহারে থেকে ভগবানের ধ্যান করে গেছেন। নিবিড় জঙ্গলে দিনের পর দিন রাতের পর রাত বছরের পর বছর এক মনে ভগবানের কঠোর তপস্যা করেছেন। তাদের কঠোর তপস্যাই ভগবান খুশি হয়ে ভগবান তাদের দেখা দিয়েছেন। এবং তাদের ভগবানের প্রাপ্তি ঘটেছেন। তাই আমাদের ধর্মে উল্লেখ আছে এক মনে ভগবান বিশ্বাসী হলে ভগবান লাভ করা যায়। ভগবানের প্রতি বিশ্বাসই হতে হবে ভগবানের স্তব স্তুতি করতে হবে। ভগবান লাভ করা সম্ভব হবে।
আদি ধর্মগ্রন্থ বেদ এবং পুরান এর মূল কথা হলো ভগবানের প্রার্থনা ভগবানের পূজারচনা। এই ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে ভগবান প্রসন্নের নানা শ্লোক এবং মন্ত্র। উপনিবেশ একটি বিশেষ হিন্দু ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মগ্রন্থে হিন্দুদের প্রাচীন জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে চার যুগের কথা। হিন্দুদের ধর্ম অনুসারে পৃথিবী জন্মের পর চারটি যুগে ভাগ করা হয়েছে। চারটি যুগের নাম হলো ১. সত্য যুগ। ২. ক্রেতা যুগ। ৩. দাপড় যুগ এবং ৪. কলিযুগ। এই ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে আমাদের হিন্দু ধর্মের চারটি যুগের কথা। সত্য যুগে মানুষ অনেক সহজ সরল ছিল। মানুষ মানুষের ভেদাভেদ ছিল না। সত্য যুগে ভগবান এসে মতে্ বসবাস করতেন। যুগের মানুষ ছিল সৎ পুরুষ নিষ্ঠাবান। অধর্মের কোন জায়গা ছিল না সত্য যুগে।
তারপর আসে ক্রেতা যুগ। নিজেকে অনেক অবতার এসেছে। তারপর দ্বাপর যুগ। দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হয়েছিলে অবতার। তারপর শুরু হয় কলিযুগ। কলিযুগে অধর্মের বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের স্বল্পতা লক্ষণীয়। এগুলো সব আমাদের আদি ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
তারপর এসেছে গীতা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় একটি গ্রন্থ। এখানে গীতার ১৮ টি নাম। নামের যোগ্য ব্যাখ্যা রয়েছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনেক মন্ত্র গীতাতে উল্লেখ রয়েছে। গীতাতে শ্রীমদ্ভাগবত গীতা এর সম্পূর্ণ শ্লোক অর্থসহ গ্রন্থিত আছে। গীতার 18 টি নামগুলো হল:- ১.গঙ্গা ২.গীতা ৩.সাবিত্রী ৪.সীতা ৫.সত্য ৬.প্রতিব্রতা ৭.ব্রম্হাবলি ৮. ব্রহ্মাবিদ্যা ৯. শ্রী ১০. সন্ধ্যা ১১.মুক্তি গৃহিণী ১২.অর্ধমাত্রা ১৩.শীদানন্দ ভবনী ১৪.ভাংতিনাশিনী ১৫.বেদো ত্রয়ী ১৬.পরমানন্দ ১৭. তথাস্ত ১৮.জ্ঞান মঞ্জুরি। গীতাতে এই 18 টি নামের যথার্থ ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে। গীতাতে রয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গুণগান। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের কথা। গীতাতে রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের অবতারের নানা কাহিনী।
তারপর হিন্দু ধর্মের আরেকটি গ্রন্থের নাম মহাভারত। রয়েছে অনেক পর্ব। কাহিনী। মহাভারত হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুনের কথোপকথন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ময়দানে অর্জুন যখন আপনজনের প্রতি আঘাত হান্তে সংকোচ বোধ করে তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে জ্ঞান দান করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন যুদ্ধের বিপরীতে এবং অধর্মের পক্ষে তোমার আপনজন যতই থাকুক তোমাকে অধর্মের বিনাশ করতে হবে। ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এজন্য তোমাকে যুদ্ধে তোমার সর্বশেষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনুপ্রেরণায় অর্জুন অর্থাৎ পাণ্ডবগণ যুদ্ধে জয়লাভ করেন। এবং কুরু বংশের হার হয়্। হিন্দুদের একটি বিশাল ধর্মগ্রন্থ হলো মহাভারত।
হিন্দুদের একটি বৃহত্তম ধর্ম গ্রন্থ হলো রামায়ণ। ভগবান রামের জীবন কাহিনী রয়েছে রামায়ণে। অযোধ্যার রাজা রামের জীবনের বলিদান এবং নানা শিক্ষামূলক কাহিনী হিন্দুদের রামায়ণ নামে পরিচিত।