৬৪ জেলার নামের তালিকা

৬৪ জেলার নামের তালিকা

বাংলাদেশে ৬৪ টি জেলা রয়েছে একথা আমরা সকলেই জানি কিন্তু যদি কাউকে ৬৪ টি জেলার নাম বলতে বলা হয় তবে ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জন মানুষই হয়তো বলতে পারবেনা। সংখ্যাটা বোধহয় একটু বেশিই বলে ফেললাম, আমার কাছে তো মনে হয় ১০০০ জন মানুষের মধ্যে ৯৯৯ জন মানুষ ৬৪ জেলার নাম একসাথে বলতে পারবে না। ৬৪ জেলার নাম একসাথে বলাটা খুবই কঠিন কাজ। যদি কেউ নাম গুলো মুখস্ত করে রাখে তবে হয়তো বলতে পারবে। ৬৪ জেলার নাম একসাথে জেনে রাখা খুব একটা প্রয়োজনীয় নয়। এরপরও অনেকেই একসাথে ৬৪ জেলার নাম সংগ্রহ করতে চায়। আপনারা যারা ৬৪ জেলার নামের তালিকা খুঁড়ছেন তাদের জন্যই আমাদের আজকের পোস্ট। আজকের আর্টকেলে আমরা বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলা নিয়ে বড় পরিসরে আলোচনা করব। চলুন দেখা যাক বাংলাদেশের কোন বিভাগে কোন কোন জেলা রয়েছে এবং এই জেলাগুলো কি কারনে বিখ্যাত।

আপনারা নিশ্চয় জানেন বাংলাদেশে বর্তমানে আটটি বিভাগ রয়েছে। আটটি বিভাগের নাম আমাদের কারো কাছেই অজানা নয়। এরপরও আরো একবার আপনাদের জন্য তুলে ধরছি। বাংলাদেশের আটটি বিভাগ হল ঢাকা-চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা , রাজশাহী, রংপুর বরিশাল ও ময়মনসিংহ। এর মধ্যে ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহর হচ্ছে ঢাকা। চলুন দেখি ঢাকা বিভাগের মধ্যে কোন কোন জেলা রয়েছে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে যেসব জেলা রয়েছে সে জেলাগুলো কি জন্য বিখ্যাত তা নিয়েও ছোট করে আলোচনা করা হবে।

ঢাকা বিভাগে মোট 13 টি জেলা রয়েছে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত জেলাগুলো হলো ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ,মানিকগঞ্জ ,নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ ,নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর ,শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী। প্রথমে কথা বলি ঢাকা জেলা নিয়ে। ঢাকা জেলার মধ্যে পাঁচটি উপজেলা রয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন ঢাকা জেলায় দুইটি সিটি কর্পোরেশন রয়েছে যার একটি হল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং অপরটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বেশ কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং জনপ্রিয় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ঢাকায় রয়েছে। আপনারা হয়তো জানেন ঢাকা শহর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এছাড়াও জাতীয় সংসদ ভবন ঢাকায় অবস্থিত যেখান থেকে বাংলাদেশের সরকার রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

ঢাকা বিভাগের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী জেলার নাম নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ নামটি শুনলেই যে নামটি সবকিছুর আগে মনে পড়ে তাহলে সোনারগাঁও। সোনারগাঁও একসময় বাংলার রাজধানী ছিল। নারায়ণগঞ্জ হচ্ছে ঢাকা বিভাগের সবচেয়ে ছোট জেলা। নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে একটি সিটি কর্পোরেশনও রয়েছে। দেশের জনপ্রিয় অনেক শিল্প কারখানা রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে। গাজীপুর হলো ঢাকা বিভাগের আরেকটি জেলা যেখানে অসংখ্য পোশাক শিল্পের কারখানা রয়েছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গাজীপুরে অবস্থিত। সুতরাং বুঝতেই পারছেন বাংলাদেশের অর্থনীতি কতটা নির্ভরশীল গাজীপুর জেলার উপর।

মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ ইজতেমার কথা আপনারা শুনে থাকবেন। ইজতেমা কোথায় হয়ে থাকে তা কি আপনারা জানেন? ইজতেমা হয়ে থাকে তুরাগ নদীর তীরে যা গাজীপুরে অবস্থিত। গাজীপুর জেলায় রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও গাজীপুর জেলায় দর্শনীয় অনেক স্থান রয়েছে। এছাড়াও ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলাগুলোও ভীষণ সুন্দর। পরে কোন এক সময় আমরা ঢাকা বিভাগের প্রতিটি জেলা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

এখন কথা বলা যাক চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলো নিয়ে। চট্টগ্রাম বিভাগে মোট ১১ টি জেলা রয়েছে। এই ১১ টি জেলা হলো চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ,চাঁদপুর ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া ,রাঙ্গামাটি ,লক্ষ্মীপুর ,নোয়াখালী, ফেনী ,খাগড়াছড়ি ও কুমিল্লা। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বলুন তো বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী কোনটি? আপনি কি উত্তর দেবেন? ঢাকা? বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হলেও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে আমরা চট্টগ্রাম কে জানি। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। চট্টগ্রামকে অনেকে বন্দরনগরী নামেও ডাকে। পাহাড় ও সমুদ্রে ঘেরা একটি জেলা হচ্ছে চট্টগ্রাম। কখনো চট্টগ্রামে গেলে এর সৌন্দর্য দেখে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন।

কর্ণফুলী নদীর নাম আপনি শুনে থাকবেন যে নদীটি চট্টগ্রামে রয়েছে। সমুদ্রপথে কেউ যদি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চায় তবে তাকে চট্টগ্রাম দিয়েই প্রবেশ করতে হবে। এখন আমরা যে জেলার কথা বলব তা বাংলাদেশের এমন কোন মানুষ শোনেনি বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন একবার হলেও কক্সবাজার ভ্রমণ করা। শুধুমাত্র বাংলাদেশেরই বা বলছি কেন, সারা বছর বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক পর্যটন কক্সবাজার ভ্রমণ করতে আসে। বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলো কক্সবাজারের রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, ছেঁড়া দ্বীপ, হিমছড়ি হল কক্সবাজারের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।

আপনারা যদি কেউ কক্সবাজার ভ্রমণ করতে চান তবে এই জেলার সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে নিয়েই ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিবেন। আগে থেকে সকল তথ্য সংগ্রহ করে ভ্রমণে সিদ্ধান্ত নিলে পরে ভ্রমণের সময় কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে তিনটি পার্বত্য জেলা রয়েছে যেগুলো হল বান্দরবান খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি। এই জেলাগুলোকে পার্বত্য জেলা বলা হয় কারণ এই জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে শুধু উঁচু-নিচু পাহাড়। পার্বত্য জেলাগুলোর মানুষ পাহাড়ের উপর ঘর তৈরি করে বসবাস করে এবং জুম চাষ করে। এই জেলাগুলোতে ক্ষুদ্র নিগোষ্ঠীদের বসবাস। চাকমা আমার মাছ হারাও মনে পড়ে গারো খাসিয়া উপজাতিরা এই জেলাগুলোতে বসবাস করে।

চায়ের জন্য বিখ্যাত হলো সিলেট। সিলেট বিভাগের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য চা বাগান। সিলেট বিভাগের মধ্যে মাত্র চারটি জেলা রয়েছে। সিলেট হবিগঞ্জ সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা নিয়ে সিলেট বিভাগ। সিলেট বিভাগের পর্যটনকেন্দ্র গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জাফলং, শাহজালাল (রহমতুল্লাহি আলাইহি) মাজার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সিলেট বিভাগের মধ্যেও অনেক ক্ষুদ্র নিগোষ্ঠী বসবাস করে। আপনারা নিশ্চয় জানেন সিলেট বিভাগের অনেক মানুষ ইউরোপের দেশগুলোতে বসবাস করে তাই সিলেটকে বাংলাদেশের লন্ডনও বলা হয়।

বাংলাদেশের সর্বশেষ বিভাগ হলো ময়মনসিংহ। ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার আগে এটি ঢাকা বিভাগের অংশ ছিল। ময়মনসিংহ বিভাগেও চারটি জেলা রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা গুলো হল ময়মনসিংহ, শেরপুর ,জামালপুর ও নেত্রকোনা।

রাজশাহী বিভাগে আটটি জেলা রয়েছে। রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা হলো রাজশাহী, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ,পাবনা, নওগাঁ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর। সারা বাংলাদেশের মানুষ রাজশাহী চেনে শুধুমাত্র আমের জন্য। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রচুর পরিমাণ আমের উৎপাদন হয়। বলা যায় সারা বাংলাদেশের আমের চাহিদা পূরণ করে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও রাজশাহী বিভাগের অন্যান্য জেলাগুলোতেও কমবেশি আম উৎপাদিত হয়। এছাড়াও নাটোর জেলা কাঁচাগোল্লার জন্য বিখ্যাত। রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থানগুলো হলো নাটোরের উত্তরা গণভবন, পাবনার মানসিক হাসপাতাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পুঠিয়ার রাজবাড়ি, বাঘা মসজিদ ইত্যাদি।

বরিশাল ,ঝালকাঠি ,পটুয়াখালী ,বরগুনা পিরোজপুর ও ভোলা জেলা নিয়ে বরিশাল বিভাগ। বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। সারা বছর দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে আসে।

এখন কথা বলা যাক উত্তরের জেলাগুলো নিয়ে। উত্তরের জেলাগুলা বলতে আমরা রংপুর গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট দিনাজপুর , নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলা কে বুঝিয়েছি। এই জেলাগুলো রংপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। রংপুর এক সময়ে রাজশাহী বিভাগের অংশ ছিল। রংপুরে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যদিও শীতের সময় এ জেলাগুলোতে যাওয়া অন্যান্য জেলার মানুষদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

সবশেষে আমরা যে বিভাগের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি তা হলো খুলনা বিভাগ। বাংলাদেশের দক্ষিণের বিভাগ হল খুলনা। খুলনা শুনলেই চলে আসে সুন্দরবনের কথা। খুলনা যশোর মাগুরা নড়াইল ঝিনাইদহ বাগেরহাট মেহেরপুর সাতক্ষীরা কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলা রয়েছে খুলনা বিভাগের মধ্যে। সুন্দরবন ছাড়াও খুলনা বিভাগের মধ্যে বেশ কিছু দর্শনের স্থান রয়েছে। বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ , কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি, লালন শাহের মাজার হল খুলনা বিভাগের দর্শনীয় স্থান। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা নিয়ে আরো আলোচনা করা হবে পরের কোন পোস্টে। আশা করি পরের পোস্ট পাওয়া পর্যন্ত আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *