নামের পদবি তালিকা
আমরা আমাদের আশেপাশে অনেক মানুষের নামের শেষে তাদের পদবী যোগ করতে দেখি। সেই পদবী বর্তমানে হিন্দু এবং মুসলিম সকলেরই রয়েছে। একসময় ভাবা হতো যে শুধুমাত্র হিন্দুদের নামের শেষেই পদবী যুক্ত থাকে কিন্তু বর্তমানে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম খৃষ্টান সকলের নামের শেষেই পদবী যুক্ত থাকে। যেমন আমরা বলতে পারি যে আব্দুর রহিম সরকার। আব্দুর রহিমের সাথে তার পদবী সরকার যুক্ত হয়েছে। অথবা খন্দকার শরিফুল হক এই নামে শরিফুলের পূর্বে তার বংশের পদবী খন্দকার যুক্ত হয়েছে।
এমনিভাবে আমরা যে পদবী হিন্দুদের ক্ষেত্রেও দেখি তাও রয়েছে যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সৌরভ গাঙ্গুলী সুকুমার রয় এরকম ধরনের তাদের নামের পরে অনেক পদবী যুক্ত রয়েছে। তবে হিন্দু-মুসলিম যাই বলি না কেন প্রথম থেকেই যে এই পদবী গুলো এসেছে তা কিন্তু নয়। প্রথমে আমরা হিন্দু ধর্মের কথা বলতে পারি। আমরা যারা বর্তমান হিন্দু ধর্মালম্বী তারা সকলেই কোন ঋষির বংশধর অর্থাৎ আর্য যে ঋষি ছিল সেই ঋষিদের পদবী আমরা ব্যবহার করতাম অর্থাৎ সেই গোত্রকথা এখানে দেখা যায়। অর্থাৎ আমাদের পূর্বপুরুষরা যে ঋষির শিষ্য ছিলেন সেই ঋষির গোত্র ব্যবহার করতেন তখন নামের কোন পদবী ছিল না। সকলেই একই জাত সেখানে জাত প্রথার কোন বিষয় ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে যখন বাংলায় সেনরা যারা রাজত্ব করেছেন তখন এই কৌলিন্য প্রথা আমাদের মাঝে এসেছে। অর্থাৎ বাংলা বাংলায় হিন্দুদের মধ্যে তখন পদবী প্রথা আসে। হিন্দুদের ক্ষেত্রে এ কথা বলা যায় যে হিন্দুদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় চারটি বর্ণের কথা উল্লেখ রয়েছে যদিও কিন্তু সেটি আসলে বর্তমানে যে জাত প্রথা প্রচলিত সে জাত প্রথা নয়।
সেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানুষের কর্মের ওপর যে শ্রেণীবিভক্ত করেছেন তখনকার সেটি হল জাত প্রথা। অর্থাৎ যে মানুষ যে ধরনের কর্ম করবে তখন সে ওই জাতের হবে। আরেকটু ভালো করে বললে বোঝাতে হয় যে সকল মানুষজন জ্ঞানী জনগণকে জ্ঞান বিতরণ করবে তারা ব্রাহ্মণ যারা রাজকার্যে রাজ্যের সুরক্ষা দিবে অর্থাৎ রাজ্যের জন্য তারা যুদ্ধ করবে তাদেরকে বলা হবে ক্ষত্রিয়। এছাড়া যারা কৃষি পালন করবে বা কৃষিকাজ পশু পালন করবে তাদেরকে ভবিষ্য এবং সকল জাতিকে যারা সেবা করবে তাদেরকে বলা হয় শূদ্র জাতি। কিন্তু এই জাত প্রথা ভেঙ্গে মানুষ অর্থাৎ ব্রাহ্মণরা অর্থাৎ তখনকার বল্লাল সেন থেকে এই পদবী ব্যবহার হতো শুধুমাত্র জাত্ত থাকে অর্থাৎ বর্ণ প্রথার বিষয় হিসেবে। তখন থেকে বাঙ্গালী হিন্দুরা তাদের স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের পদবী অর্থাৎ নামের শেষে পদবী গ্রহণ করত।
এভাবে ই একজন নামের পদবী পেয়েছে পরবর্তীতে অবশ্য এই পদবী গুলো আবার তারা বাতিল করে অন্য পদে বিয়োগ গ্রহণ করেছে এভাবেও এসেছে অনেক ধরনের পদবী। ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রেও আমরা এই ধরনের বিষয়গুলি দেখতে পাই। যে তাদের মধ্যেও বিভিন্ন জাত প্রথা থাকলেও আসলে পদবীটা এসেছে অনেক পরে। অর্থাৎ মুঘল আমলে মুসলমানদের মধ্যে এ ধরনের পদবী গ্রহণ করার বিষয়টি এসেছে বলে ধারণা করা হয়। মুঘল ও অন্যান্য মুসলিম শাসন আমলে বাঙালি মুসলমানদের নামের পরে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের পদবী। যেমন সে সময় মুসলমানেরা পদবী হিসেবে ভূঁইয়া তালুকদার মঞ্চে বেপারী বাহাদুর সরদার দেওয়ান দফাদার হাওলাদার মহরে খন্দকার মাতবর খলিফা সৈয়দ পাটোয়ারীএ ধরনের বিভিন্ন পদবী তাদেরকে নামের শেষে যুক্ত করতে দেখা গেছে। এবং সেখান থেকেই ধারণা করা হয় যে মুসলিম সমাজে নামের পরে পদবী যুক্ত হয়।
এরপরে আবার আমরা দেখি যে খ্রিস্টান সমাজেও পদবী এসেছে আরও বিচিত্রভাবে। এভাবে আমরা আমাদের প্রতিটি বাঙালি সমাজে নামের পরে পদবী যুক্ত হয়েছে। আপনারা তাহলে আমাদের এই পোস্ট থেকে বাঙালি মানুষদের নামের পরে যে পদবী যুক্ত হয়েছে সেই পদবীর তালিকা দেখতে এসেছেন। এ তালিকা অবশ্যই আপনারা দেখতে পাবেন কখনো কখনো দেখা যায় যে হিন্দু এবং মুসলিম একই ধরনের পদবী গ্রহণ করে আবার অনেক ক্ষেত্রে হিন্দু এবং মুসলিমদের নামের পরে পদবী আলাদা ধরনের হতে পারে। সকল ধরনের পদবী আমরা আপনাদের এখন দেখাবো। তাহলে নামের পরে পদবীর তালিকা খুব সুন্দর ভাবে দেখে নেন তাহলে।