পিঠার নামের তালিকা
পিঠা তৈরি করতে ও খেতে যারা পছন্দ করেন তারা আমাদের আজকের আর্টিকেল থেকে বিভিন্ন ধরনের পিঠার নাম জেনে নিতে পারবেন। এছাড়াও পিঠাগুলো কিভাবে তৈরি করতে হয় সে বিষয়েও আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। সাধারণত শীতের মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের পিঠা গ্রাম অঞ্চলে তৈরি করা হয়। খেজুরের গুড় ও নতুন ধান দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয় এ সময়। এ সময় যে ধরনের পিঠাগুলো তৈরি করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, চিতই পিঠা। নবান্ন সম্বন্ধে আপনাদের নিশ্চয়ই ধারণা রয়েছে। নবান্ন বলতে নতুন ধান কে বোঝায়। নবান্ন উৎসব সাধারণত হেমন্তকালে হয়ে থাকে। হেমন্ত আসলেই প্রতিটি ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর ধূম পড়ে যায়। চলুন বিখ্যাত কয়েকটি পিঠা নিয়ে আমরা আলোচনা করে আসি।
পিঠার কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় ভাপা পিঠার কথা। শীতের সকালে গরম ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা খাবার মজাই আলাদা। আপনারা যারা ভাপা পিঠা খেতে পছন্দ করেন তারা নিজেকে নিজে ভাপা পিঠা তৈরি করার পদ্ধতি জেনে নিতে পারেন। ভাপা পিঠা তৈরি করতে কি কি উপকরণ প্রয়োজন হবে প্রথমে তা জেনে নিই। ভাপা পিঠা তৈরি করার জন্য প্রয়োজন হবে চালের গুড়া, গুড়, ভাপা পিঠা বানানোর হাড়ি। এ উপকরণগুলো দিয়েই সুস্বাদু ভাপা পিঠা তৈরি করা সম্ভব। চালের গুড়া গুড় এবং নারিকেল মিশিয়ে ভাপা পিঠা তৈরি করা হয়। বিভিন্ন অঞ্চলে ভাপা পিঠাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়ে থাকে। অনেকে সকালের নাস্তা হিসেবে ভাপা পিঠা নিয়মিত খেয়ে থাকেন।
আরো একটি সুস্বাদু পিঠা হল চিতই পিঠা। রসে ডুবানো চিতই পিঠা খাবার মজাই আলাদা। যারা একবার হলেও চিতই পিঠা খেয়েছেন তারা নিশ্চয়ই বারবার খেতে চাইবেন। আমরা সকলেই সুস্বাদু চিতই পিঠা খেলেও অনেকেই চিতই পিঠা বানানোর পদ্ধতি জানিনা। চিতই পিঠা তৈরি করতে কি কি উপকরণ প্রয়োজন হয় তাও আমাদের অনেকেরই অজানা।
চলুন জেনে নেওয়া যাক চিতই পিঠা তৈরি করতে কি কি উপকরণ প্রয়োজন হয়। চিতই পিঠা তৈরি করার জন্য আটা, গুড়, নারিকেল, দুধ , গরম তাওয়া ও রসে ডুবানোর জন্য হাড়ি প্রয়োজন হবে। প্রথমে গরম পাওয়ার উপর চালের আটা গুলিয়ে চিতই পিঠা তৈরি করতে হবে। এরপর জিতে পিঠা গুলি গুর নারিকেল ও দুধ দিয়ে তৈরি রসের মধ্যে ডুবাতে হবে। রসে ডুবানো এই চিতের পিঠা গুলো তখনই খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। আপনারা চাইলে এখনই বাড়িতে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। নিজের প্রিয় জনকে চিতই পিঠা তৈরি করে খাওয়াতে পারেন।
পুলি পিঠা নাম শোনেননি এমন ব্যক্তি হয়তো আমাদের দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাঁকা চাঁদের মতো পিঠা নিশ্চয়ই আপনি দেখেছেন। ছোট রুটির মত কেটে নিয়ে বাঁকা চাঁদের মত পিঠা তৈরি করা হয়।। আমাদের দেশে পুলি পিঠা খুবই জনপ্রিয়। আপনি চাইলে নিজের পছন্দমত উপকরণ দিয়ে পুলি পিঠা তৈরি করতে পারবেন। নারিকেল সহ পুলিপিঠা তৈরি করতে পারবেন অথবা নারিকেল ছাড়াও পুলিপিঠা তৈরি করতে পারবেন। চলুন জেনে নেই পুলি পিঠা কিভাবে তৈরি করতে হবে। প্রথমে আটা মাখিয়ে রুটি তৈরি করতে হবে।
এরপর স্টিলের গ্লাস দিয়ে রুটিগুলো ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে। এই ছোট অংশগুলো একপাশ আরেক পাশের সাথে লাগিয়ে আটকে দিলেই পলি পিঠা তৈরি হয়ে যাবে। তবে আটকে দেওয়ার আগে এর মধ্যে হালুয়া দিতে হবে। এভাবে খুব সহজে পুলি পিঠা তৈরি করা সম্ভব। এরপর এই পিঠাগুলো রসে ডুবিয়ে রান্না করতে হবে। আপনি চাইলে ভেজেও পিঠা খেতে পারেন। পুলি পিঠা খেতে অনেক সুস্বাদু হয়। প্রয়োজনে উপকরণ সংগ্রহ করে এখনই লেগে পড়ুন পুলি পিঠা বানানোর কাজে।
গ্রামের মেয়েরা দারুন সব নকশী পিঠা তৈরি করে শীতের সময়। বিভিন্ন ছাচে ফেলে এই নকশী পিঠাগুলো তৈরি করা হয়। এরপর রসে ডুবে অথবা এমনিতেই নকশি পিঠাগুলো পরিবেশন করা হয়। যারা নিয়মিত গ্রামে যাওয়া আসা করেন তারা হয়তো এ ধরনের নকশী পিঠা অনেকবার খেয়েছেন। নকশি পিঠাগুলো তৈরি করতে সাধারণত পিঠা তৈরীর ঐ উপকরণ গুলোই লাগে যেগুলো আমরা আগে বর্ণনা করে এসেছি। তবে এক্ষেত্রে পিঠা বানানোর ছাচ প্রয়োজন হবে। নতুন নতুন ছাচে ফেলে খুব সহজেই নকশি পিঠা তৈরি করতে পারবেন। আপনার পছন্দমত ছাঁচে ফেলে পিঠা তৈরি করা যাবে। আশা করি একটু চেষ্টা করলেই নকশি পিঠা তৈরি করা যে কারো পক্ষে সম্ভব। আর যদি প্রথমবারে ব্যর্থ হন তবে বাড়ির বড় কারো সাহায্য নিয়ে পরেরবার নিশ্চয়ই সফল হতে পারবেন।।
যারা শহরে বসবাস করেন তারা হয়তো তালের পিঠা খুব একটা খেতে পারেন নি। তাল দিয়ে অসাধারণ সব পিঠা তৈরি করা যায়। তাল রুটি তাল বড়া এগুলোর নাম নিশ্চয়ই আপনারা শুনেছেন। চলুন দেখে আসা যাক তাল দিয়ে সুন্দর সুন্দর সব পিঠা কিভাবে তৈরি করা যায়। প্রথমত পাকা তালকে গুলে নিতে হবে এবং গুলার পর আটার সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। আটার সাথে মাখিয়ে আপনি তাল রুটি তৈরি করতে পারবেন। আবার একই ভাবে তালবড়া তৈরি করা যায়। তাল বড়া তৈরি করার জন্য আপনাকে কড়াইয়ের মধ্যে তেলে ডুবিয়ে বড়াগুলোকে খাওয়ার উপযোগী করে তুলতে হবে। তাল বড়া ও তাল রুটি খেতে গেলে তালের মিষ্টি গন্ধ আপনাকে মাতাল করে তুলতে পারে। এই আর্টিকেলটি পড়ার পর নিশ্চয়ই আপনি তালের পিঠা খাবার জন্য পাগল হয়ে যাবেন।
গ্রাম অঞ্চলে আরো অনেক ধরনের পিঠা তৈরি করা হয়। এসব পিঠাগুলোর রেসিপি একই রকম না হলেও উপকরণগুলো সাধারণত একই রকম হয়ে থাকে। এগুলো নিজে নিজে বাড়িতে নিয়মিত প্র্যাকটিস করলে খুব সহজে সব ধরনের পিঠা তৈরি করা সম্ভব। পিঠা তৈরি করার পর আপনারা চাইলে প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আপনি যদি ভেবে না পান প্রিয় মানুষকে কোন ধরনের খাবার রান্না করে খাওয়াবেন তবে মাঝেমধ্যেই পিঠা তৈরি করে খাওয়াতে পারেন। পিঠা তৈরি করার কাজটি অত্যন্ত সহজ এবং খুব কম খরচের মধ্যেই তৈরি করা যায়।
কম সময় ও কম পরিশ্রমে আপনি অনেক সুস্বাদু পিঠা তৈরি করতে পারবেন। তবে পিঠা তৈরি করার আগে পিঠার নামগুলো এবং বানানোর পদ্ধতি গুলো খুব ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। জেনে নেওয়ার পর নিজে নিজে বেশ কয়েকদিন অনুশীলন করতে হবে। প্রথমদিকে নিজের তৈরি করা পিঠা আপনার কাছে খুব ভালো না লাগতে পারে। বারবার প্র্যাকটিস করতে করতে একসময় আপনি অনেক সুস্বাদু পিঠা তৈরি করতে পারবেন। আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি পিঠা নিয়ে আলোচনা করেছি।
পিঠাগুলো কিভাবে তৈরি করতে হয় সে সম্বন্ধেও আপনাদের স্বল্প পরিসরে ধারণা দিয়েছি। এখন থেকে আপনারা বাড়িতে নিয়মিত পিঠা তৈরির অনুশীলন করতে পারেন। নিজে নিজে তৈরি করতে পারেন এবং মাঝে মাঝে বড়দের সাহায্য নিতে পারেন। এভাবে এক সময় আপনি নিজেও পিঠার অনেক বড় কারিগর হয়ে যাবেন। অনেকে হয়তো ভাবেন পিঠা তৈরি করা ভীষণ কঠিন একটি কাজ। আর যেহেতু পিঠা তৈরীর উপকরণ সম্বন্ধে ও পদ্ধতি জেনে নিতে পারলেন তাই এখন হয়তো আপনার কাছে কাজটি মোটেও কঠিন মনে হবে না।
আরো অনেক পিঠার নাম ও তৈরি করার পদ্ধতি জেনে নেওয়ার জন্য আমাদের পরের পোস্টগুলো ফলো করুন। আর হ্যাঁ, আপনার তৈরি করা পিঠাগুলো কেমন হলো তা নিশ্চয়ই আমাদের জানাবেন কমেন্ট বক্সে এসে। আগামী দিনে পিঠার নামের আরো তালিকা পেতে চান কিনা সে ব্যাপারে আপনার মতামত দিয়ে যাবেন।