শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা

১৪ই ডিসেম্বর। বাঙ্গালীদের জন্য সারা জীবন মনে রাখার মত একটি দিন। এ দিনটি বাঙ্গালীদের আফসোস করার দিনও বলা যায়। ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা নির্মমভাবে হত্যা করে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের। ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ রাতে বাঙ্গালীদের ওপর পাকিস্তানীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অপারেশন সার্চলাইট সম্বন্ধে আমরা সকলেই জানি। ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানের হামলা করেছিল বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় হল গুলোতে, অনেক মেধাবী ছাত্রকে সে রাতে মেরে ফেলে তারা। এর আগে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালীদের স্বাধীনতার সংগ্রামে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বাঙালিরা ও নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছিলেন সংগ্রামে যোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু যখন পাকিস্তানিরা ২৫ মার্চ রাতে নির্বিচারে একের পর এক মানুষকে হত্যা করতে শুরু করল তখন আর বাঙালিরা ধৈর্য ধরতে পারেনি। বাঙালিরা তখন বুঝতে পারে পাকিস্তানেদের হারাতে চাইলে নেমে পড়তে হবে ময়দানে। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন। বাঙালিরা নিজের শেষ সম্বলটুকু নিয়েই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস তা আমরা সকলেই জানি। এর কারণ হলো ২৬শে মার্চ থেকেই প্রতিটি বাঙালি নিজেদের বাংলাদেশের নাগরিক ভাবতে শুরু করে।

অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান নামে যে পাকিস্তানের যে অংশটি ছিল তা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং বাংলাদেশ নামে নতুন ভাবে যাত্রা শুরু করে। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করব শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কেন হত্যা করা হলো এবং তাদের হত্যা করার কারণে বাংলাদেশের কতটা ক্ষতি হয়েছে এ বিষয়গুলো তুলে ধরব আজকের লেখায়। শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকুন আর গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্যগুলো জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন।

বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানে না কি কারনে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশ তো ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে জয় পেয়েছিল তাহলে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের কেন এই কাজটি করলো। এর পিছনে ছিল অনেক বড় একটি ষড়যন্ত্র। বিষয়টি সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার জন্য আমাদের চলে যেতে হবে সেই ১৯৪৭ সালে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ও ১৫ই আগস্ট ভারত উপমহাদেশের দুটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। একটি হলো ভারত ও অপরটি হলো পাকিস্তান। পাকিস্তানের আবার দুইটি অংশ একটি পূর্ব পাকিস্তান অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান। এই ঘটনাটি কি আমরা সাধারণত দেশভাগ হিসেবে জানি।

১৯৪৭ সালের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত একত্রে ছিল। সে সময় ভারত বর্ষ শাসন করতো ব্রিটিশরা। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হবার পর থেকে ব্রিটিশরা এদেশের রাজত্ব শুরু করে। ব্রিটিশ আমলে ভারতবর্ষে সাধারণ মানুষ কখনোই নিজের অধিকার পুরোপুরি ভাবে আদায় করতে পারেনি। ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে, চাপিয়ে দিয়েছে করের বোঝা। পরের বোঝা বইতে বইতে কৃষকরা দিনের পর দিন অনাহারে কাটিয়েছে।

এভাবেই কেটে গেছে অনেক অনেক বছর। তবে ভারতবর্ষের মানুষ কখনোই এমন ভাবে দিন কাটাতে চায়নি। তারা মুক্তি চেয়েছে। অনেক আন্দোলনের পর শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে চলে যাওয়ার আগে তারা ভারতবর্ষকে দুটি ভাগে ভাগ করে দিয়ে যায়। এই ঘটনাটি ঘটে 1947 সালে যেটাকে আমরা দেশভাগ বলছি। ভারতবর্ষের মানুষ ব্রিটিশদের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। তাদের এই দেশভাগের সিদ্ধান্তের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বাঙালিদের।

পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্বের ব্যবধান ছিল অনেক বেশি। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা বাঙ্গালীদের কোন ধরনের অধিকার দিতে চায়নি। তারা সব সময় সবকিছুতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের এগিয়ে রেখেছে। যেকোনো সরকারী সুযোগ-সুবিধা বাঙালিরা কখনোই পায়নি। বাঙালি বলতে আমরা এখানে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে বুঝিয়েছি। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে প্রায় শতভাগ বাঙালি। এখানকার মানুষের প্রধান ভাষা ছিল বাংলা। বাংলা ছাড়া অন্যান্য ভাষায় কথা বলে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম নেই বললেই চলে। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানরা বাঙ্গালীদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার জন্য।

স্বাভাবিকভাবেই বাঙালিরা এই বিষয়টি মেনে নিতে পারেন। মেনে নেওয়ার কথাও এটা নয়। আমরা ছোটবেলা থেকে যে ভাষায় কথা বলে আসছি হঠাৎ করে যদি সেই ভাষায় কথা বলতে না পারি তবে কিভাবে মনের ভাব প্রকাশ করব? তাই বাঙালিরা পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার জন্য সংগ্রাম শুরু করে। রাজপথে নেমে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল শুরু করে। পুলিশ ও একের পর এক গুলি ছুড়তে থাকে ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে।

১৯৫২ সালের সেই দিনটিতে জানাও জানাও অনেক ছাত্র শহীদ হয়। আজও আমরা সেই দিনটিকে ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে পালন করি। পুরো পৃথিবীতে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এভাবেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীদের আন্দোলন শুরু হয়। এর মাঝে বাঙালিরা বেশ কয়েকবার শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাকিস্তানিদের সামরিক শক্তি দিয়ে তারা আন্দোলন থামিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে শুরু হয় বাঙ্গালীদের সশস্ত্র আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে।

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর 1971 সালের 16 ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ী হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে এসে পাকিস্তানিরা জঘন্য একটি কাজ করে। ১৪ই ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি মিলিটারিরা বাংলাদেশের মেধাবী কিছু মানুষকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। এদের মধ্যে কেউ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কেউ ছিল ডাক্তার, কেউ ছিল আইনজীবী, কেউ ছিল লেখক আবার কেউ ছিল সাংবাদিক। পাকিস্তানের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মেধাবী মানুষগুলোকে হত্যা করা এবং বাংলাদেশকে একদম মেধাশূন্য করে ফেলা।

এ মানুষগুলো বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারতেন। আমরা জানি শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষিত মানুষকে যদি আমরা একে একে হারিয়ে ফেলি তবে দেশের মেরুদন্ড ভেঙে যায়। এ কাজটি করতে চেয়েছিল পাকিস্তানিরা। পাকিস্তানিরা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছে ঠিকই কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্বন্ধে আপনারা অনেক কিছুই জানতে পারলেন। সেদিন এই মানুষগুলোকে পৃথিবী ছেড়ে যেতে না হলে হয়তো আমরা অন্যরকম একটি বাংলাদেশ পেতাম। বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে শক্ত একটি জায়গা দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। বুদ্ধিজীবীরাও বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে অবদান রেখেছেন। যেমন সাংবাদিকরা লেখালেখি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। ১৪ ডিসেম্বর রাতে যে মানুষগুলো শহীদ হয়েছিলেন তারা ছিলেন অত্যন্ত নিরীহ মানুষ। নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা কি পেয়েছে তা বোঝা খুব কঠিন। হয়তো বনের পশুদের পক্ষেও এতটা হিংস্র হওয়া সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ প্রতিবছর ১৪ই ডিসেম্বর কে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিন প্রতিটি বাঙালি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে। আমাদের উচিত নতুন প্রজন্মকে বুদ্ধিজীবীদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি জানানো। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেসব বইগুলো রয়েছে সেগুলো তাদেরকে পড়ানো এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে উৎসাহিত করা উচিত। এখন প্রশ্ন আসতে পারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বন্ধে কিভাবে সবাইকে জানানো যায়। আপনারা জানেন প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা বসে ঢাকায়।

বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনেক অনেক বই পাওয়া যায় যেগুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও অনলাইনের মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধের অনেক বই পেতে পারি যেখান থেকে বুদ্ধিজীবীদের সম্বন্ধে অজানা অনেক তথ্য জেনে নিতে পারি। এ বিষয়ে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে তবে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *